ঢাকা,  সোমবার
২৯ এপ্রিল ২০২৪

The Daily Messenger

বন্দি গৃহবন্দিতে খালেদা জিয়ার ১৩ ঈদ 

আবদুর রহিম

প্রকাশিত: ১২:০৩, ৭ এপ্রিল ২০২৪

আপডেট: ১৭:৪৪, ৭ এপ্রিল ২০২৪

বন্দি গৃহবন্দিতে খালেদা জিয়ার ১৩ ঈদ 

বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। ফাইল ছবি

বন্দি থেকে গৃহবন্দি অবস্থায় রয়েছেন সাবেক তিনবারের প্রধানমন্ত্রী বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। করোনার ঝুকি সময়ে প্রধানমন্ত্রীর মানবিক বিবেচনায় বিদেশে না যাওয়া, রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ না করা, বক্তব্য বিবৃতি না দেওয়াসহ কয়েকটি শর্তে বাসায় চিকিৎসা নিতে অনুমতি দেওয়া হয়। ৭৯ বয়সী সাবেক প্রধানমন্ত্রী লিভার সিরোসিস, আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, কিডনি ও ফুসফুস জটিলতাসহ নানা রোগে ভুগছেন। তার চিকিৎসায় গঠিত মেডিকেল বোর্ড গতবছর অক্টোবরে জানায়, লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত খালেদা জিয়ার লিভারের চিকিৎসা দেশে সম্ভব নয়। দ্রুত ‘বিদেশে উন্নত চিকিৎসা কেন্দ্রে নিয়ে’ তার লিভার প্রতিস্থাপন জরুরি হয়ে পড়েছে।

বার বার শারিরীক অবস্থা অবনতি হলে গত প্রায় সাত বছরে পরিবারের পক্ষ থেকে অর্ধশতবার স্থায়ী জামিন চাওয়া হলেও মুক্তি মেলেনি। আর মাত্র দুই দিন পরই ঈদ। এর মধ্যে মুক্তি পাওয়ার সম্ভাবনা দেখছেন না পরিবারের সদস্যরা। এবারও যদি খালেদা জিয়া গৃহবন্দি অবস্থায় থাকেন তাহলে গুলশান ফিরোজাতেই কাটবে ১৩ তম ঈদ। ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি কারাগারে যাওয়ার পর থেকে খালেদা জিয়ার চারটি ঈদ কারাগারে, ১টি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে, এভারকেয়ারে ১টি ঈদ এবং বাসায় গৃহবন্দি অবস্থায় ৬টি ঈদ কেটেছে। ২০১৭ সালের ২৬ জুন  চীন মৈত্রী হলে সর্বশেষ ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন এই নেত্রী। 

দলটির নেতাকর্মী বলছেন, দীর্ঘ আট বছরেরও বেশি সময়  পূর্ন স্বাধীন অবস্থায় ঈদ উদযাপনের বাহিরে রয়েছেন সাবেক এই সেনাপ্রধানের স্ত্রী। গৃহকর্মী ও পরিবারের কয়েকজন সদস্যদেরকে নিয়ে ঈদের দিন কাটে খালেদা জিয়ার। আদালতের শর্ত যুক্ত থাকায় হাইকমান্ডের নেতাদেরও সাক্ষাতের সুযোগ নেই। তবে ঈদের দিন রাতে দলের স্থায়ী কমিটির দুই একজন সদস্য দলের পক্ষ থেকে দেখা করেন। জানাগেছে- শুধু টানা এবারই নন, এর আগে ১/১১ সরকারের সময় সংসদ ভবন এলাকায় সাব জেলে বন্দি থাকাকালে ২টি ঈদ কাটিয়েছেন খালেদা জিয়া। 

২০১৮ সালে কারাবন্দি হওয়ার পর ঢাকার নাজিম উদ্দিন রোড়ের পরিত্যক্ত পুরানো কেন্দ্রীয় কারাগারে দুটি ঈদ পার করেন খালেদা জিয়া। এরপর ২০১৯ সালের বন্দি অবস্থায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় দুটি ঈদ উদযাপন করতে হয় তাকে। ২০২০ সালের ২৫ মার্চ সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার দণ্ড স্থগিত করে সরকারের নির্বাহী আদেশে তাকে মুক্তি দেওয়া পর রাধানীর এভার কেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১টি ঈদ এবং গুলশানের ফিরোজায় ৭টি কাটিয়েছেন বিএনপি প্রধান খালেদা জিয়া। এবার ঈদুল ফিতর ঈদও গুলশানের বাসায় কাটাবেন খালেদা জিয়া। 

এর আগে ২০০৭ সালের ৩ সেপ্টেম্বর সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে গ্রেপ্তার হয়ে দুটি ঈদ চার দেয়ালের মধ্যেই কাটাতে হয়েছে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে। তখন তিনি ছিলেন সংসদ ভবন এলাকার একটি ভবন যেটাকে সাবজেল হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছিল। সে সময় খালেদা জিয়ার মতো বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনারও দুটি ঈদ কাটাতে হয়েছে বন্দী অবস্থায়। পাশাপাশি ভবনে ছিলেন দুই জন। তবে পার্থক্য হচ্ছে, আগের দুই বার আসামি হিসেবে আর এবার দণ্ডিত হিসেবে কারাগারে রয়েছেন বিএনপি প্রধান। 

জানা গেছে, প্রতিবছর ঈদের দিন দুপুরে নিকটাত্মীয়দের সঙ্গে মধ্যাহ্নভোজ সারেন খালেদা জিয়া। এবারও তাঁর ভাই শামীম ইসকান্দার, তাঁর পরিবারের সদস্য ও তাঁর আরেক ভাই প্রয়াত সাঈদ ইসকান্দারের স্ত্রী ও পরিবারের অন্যরা খালেদা জিয়ার কাছে আসবেন। তাঁরা দুপুরে একসঙ্গে মধ্যাহ্নভোজে অংশ নেবেন। এছাড়া ঈদের দিন খালেদা জিয়া লন্ডনে থাকা তাঁর বড় ছেলে তারেক রহমান, তাঁর পরিবারের সদস্য এবং ছোট ছেলে প্রয়াত আরাফাত রহমানের স্ত্রী ও সন্তানদের সঙ্গে ফোনে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন। ঈদের দিন বেলা ১১টায় বিএনপির সিনিয়র নেতারা রাজধানীর শেরেবাংলানগরে দলের প্রতিষ্ঠাতা সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রয়াত জিয়াউর রহমানের (বীরউত্তম) কবর জিয়ারত করবেন। সন্ধ্যার পর বিএনপি মহাসচিবসহ স্থায়ী কমিটির সদস্যরা গুলশানের ফিরোজায় ‘গৃহবন্দি’ বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে যাবেন।  

২০১৮ সালে বিএনপি প্রধান খালেদা জিয়াকে বন্দি করা হয়। এর পর থেকে বন্দি অবস্থায় তাকে ঈদ পালন করতে হচ্ছে। এর আগে প্রতিবছর খালেদা জিয়া রাজনীতিবিদ, দেশের সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, বিদেশি কূটনীতিকসহ সর্বসাধারণের সঙ্গে যে ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় করতেন। তবে তিনি কারান্তরীণ থাকায় বিএনপির পক্ষ থেকে এই ধরনের কোনো অনুষ্ঠান করা হচ্ছে না। খালেদা জিয়ার কারাবন্দি অবস্থায় ঈদ কাটানোর বিষয়ে আক্ষেপ প্রকাশ করে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, একটা স্বৈরচারের যে শত রূপ থাকে তার প্রমান হচ্ছে বর্তমান সরকার। বিনা অপরাধে সাবেক তিন বারের প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে অন্যায় ভাবে আটক করে রাখা হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে তাকে কারাবন্দি অবস্থায় ঈদ করতে হচ্ছে। সরকারের বাধার কারণে তার জামিন হচ্ছে না। ন্যায়বিচার পেলে তিনি অনেক আগেই ছাড়া পেয়ে যেতেন।

বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম আজাদ বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে সরকারের নির্বাহী আদেশে মুক্তি দেয়া হলেও তিনি মূলত গৃহবন্দি। বেগম খালেদা জিয়া বন্দি হওয়ার পর থেকে আমরা সব সময় তার শূন্যতা অনুভব করছি। তিনি আমাদেরকে সন্তানতুল্য ভালোবাসতেন। তাকে বন্দি অবস্থায় রেখে আমারা কীভাবে ঈদ করি? 

বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান বলেন, আমার যারা বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সাথে কাজ করেছি তাদের আবেগ অনুভূতি আর দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীর আবেগ অনুভূতির মধ্যে কোনো তফাত নেই। প্রতিটি মূহুর্তে বেগম খালেদা জিয়ার শূন্যতা অনুভব করি। মহান আল্লাহর দরবারে দোয়া করি তিনি যেন এই সরকারের প্রতিহিংসা মূলক নির্যাতন থেকে মুক্তি পান ও সবসময় সুস্থ থাকেন। 

২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় পাঁচ বছরের সাজা নিয়ে কারাগারে গিয়েছিলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। ওই বছরের অক্টোবরে হাই কোর্টে আপিল শুনানি শেষে সাজা বেড়ে হয় ১০ বছর। এরপর জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায়ও আরও সাত বছরের সাজা হয় বিএনপি নেত্রীর। তিনি তখনও পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন সড়কের কারাগারে ছিলেন।

মেসেঞ্জার/দিশা

dwl
×
Nagad

Notice: Undefined variable: sAddThis in /mnt/volume_sgp1_07/tp4l1yw3zz9u/public_html/bangla/details.php on line 700