ঢাকা,  সোমবার
২৯ এপ্রিল ২০২৪

The Daily Messenger

বিএনপির সামনে ২১তম ঈদ

আবদুর রহিম

প্রকাশিত: ১৩:০৫, ৮ এপ্রিল ২০২৪

আপডেট: ১৩:১২, ৮ এপ্রিল ২০২৪

বিএনপির সামনে ২১তম ঈদ

ছবি : মেসেঞ্জার

‘ঈদের পর সরকার পতনের আন্দোলন’ এমন ঘোষণায় দুটি জাতীয় নির্বাচন এবং ২০টি ঈদ শেষে বিএনপির সামনে এবার ২১ তম ঈদ! ২০১৪ সালে একটি অনুষ্ঠানে খালেদা জিয়া বলেছিলেন," ঈদের পর আন্দোলন করবে বিএনপি। পুলিশ বাহিনী, কিংবা সরকারি দলের নেতারা যদি অস্ত্র দিয়েও বাধা দেয় তার পাল্টা জবাব দেয়া হবে"। নতুন বার্তা দিয়ে সেদিন এ-ও জানিয়েছিলেন, অতীতের আন্দোলনে ত্রুটি ছিল তাই সফল হওয়া যায়নি, ঈদের পর নেতৃত্বের যোগ্যতাকে গুরুত্ব দিয়ে মাঠে নামা হবে। এরপর খালেদা জিয়ার একই ঘোষণা দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও দলের স্থায়ী কমিটির নেতারা বার বার গত প্রায় ১০ বছর দিয়ে আসছেন। বিএনপি চেয়ারপার্সন বন্দি থেকে গৃহবন্দি অবস্থায় এবার ১৩ টি ঈদ পার করবেন।

২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়া কারাগারে যাওয়ার পর দলীয় ভূমিকা ছিলো একাবারেই নিষ্প্রাণ। মাত্র কয়েকটি দোয়া মাহফিল, প্রেস ক্লাবে মানববন্ধন ও কয়েকটি জেলা সমাবেশ হয়েছে মাত্র। সরকারের মানবিক সিদ্ধান্তে বর্তমানে তিনি শর্তে মুক্তিতে রয়েছেন। এবার দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে কূটনৈতিক সমর্থনসহ জনপ্রিয়তা থাকার পরও হাইকমান্ডের নেতৃত্ব দুর্বলতার কারণে এবারও আন্দোলনে ব্যর্থ হয় বিএনপি। ২৮শে অক্টোবরের পর টানা হরতাল অবরোধ অসহযোগ আন্দোলনের ঘোষণা দিয়ে ঘরে ফসল তুলতে পারেনি দলটি। শীর্ষ পর্যায়ের সবাই ছিলেন  কারাগারে , মাঠ পর্যায়ের নেতারা আত্মগোপনে চলে যান। রমজানে ইফতার মাহফিল কর্মসুচি গুলোতে নেতাকর্মীরা বলেছেন, আবারও তারা ঈদের পর জনগনকে সাথে নিয়ে রাজপথে নামবেন। এ নিয়ে জনমনে প্রশ্ন উঠেছে ২০ ঈদ পার করেও যে দলটি সফল হতে পারেনি তাহলে তারা কোন ঈদে সফল হবে? 

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের ভাষ্য,বিএনপির আন্দোলনে বার বার ভুল পথে হেঁটেছেন। গুরুত্বপূর্ণ কোনো ইস্যুকে কাজে লাগাতে পারেনি।  দ্বাদশ পূর্ববর্তী দলটির কর্মসূচী গুলো ছিলো বর্ষাকালে। রাস্তায় পানি জমে যাওয়ায় অনেক কর্মসূচী সফল হয়নি। এছাড়া এইচএসসি পরীক্ষার সময়েও তাদের কিছু কর্মসূচী ছিলো যা অভিভাবকরা মানেননি। নির্বাচন পূর্বে তফসিল ঘোষণা পর্যন্ত সময় ক্ষেপণ করা ছিলো বিএনপির বড় ভুল সিদ্ধান্ত।

আন্দোলন প্রসঙ্গে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম একাধিকবার বলেছেন, রাজপথে বড় কর্মসূচীর জন্য সরকার বিএনপিকে উসকানি দিচ্ছে, সরকার চায় বিএনপি জ্বালাও পোড়াও করুক কিন্তু বিএনপি সেটি বুঝতে পেরেছে। তাই জ্বালাও পোড়াও আন্দোলনে যাবে না। গণতান্ত্রিক আন্দোলন করে সরকারকে হঠাবে। কৌশল গ্রহণ করবে। এমন ভাষ্যর মধ্যে দিয়ে প্রায় এক যুগ পার করবে দলটি। এ নিয়ে দলে এবং নেট দুনিয়ায় চলছে আলোচনা-সমালোচনা।

দলটির নেতাকর্মী ও সংশ্লিষ্টরা বলছেন,প্রায় ১১  বছরে বিএনপি আন্দোলনের শত শত ইস্যু পেয়েছে একটিও কাজে লাগাতে পারেনি, মূলত সূত্র ছাড়া সমাধান খুঁজছে দলটি। অন্যদিকে, বিএনপির স্থায়ী কমিটির নেতারা ব্যাংকার, ব্যবসায়ী, বহু বাড়ির মালিক সেগুলো রক্ষার চিন্তায় কোনো কার্যত সিদ্ধান্তে আসা যায়নি। দলের ভেতরে বাহিরে অভিযোগ রয়েছে বড় অংশই সরকারের অনুগত আবার কেউ কেউ ভারতপন্থি থাকায় দলীয় উদ্দেশ্যে সফল হচ্ছে না।

এমন আলোচনা-সমালোচনার মধ্যে  তথ্য ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক  ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, বিএনপির ঈদের পর আন্দোলন বহু বছর শুনে আসছেন কিন্তু কাজে দেখেননি। এ নিয়ে বিএনপির হাইকমান্ড বলছে, স্বৈরতান্ত্রিক দলের সাথে লড়াই করা একটু কষ্ট। তাই সময় লাগছে। যুক্তি দিয়ে এ-ও বলছে, আইয়ুব খানকে সরাতে ১০ বছর সময় লেগেছে এবং এরশাদকে সরাতেও আট বছর সময় লেগেছে এই সরকারকেও তাঁরা সরাতে পারবেন । তৃণমূল নেতাকর্মীরা আন্দোলন চান। মাঠে নামতে চান। এরপরও কেন সম্ভব হচ্ছে না এ বিষয়ে কয়েকজন মাঠপর্যায়ের নেতাকর্মী জানিয়েছেন, দলটির যে নীতি নির্ধারণী ফোরাম রয়েছে স্থায়ী কমিটি তা অকার্যকর। তারা কোনো অদৃশ্য ইশারায় কার্যত সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন না। অনেকেই অসুস্থ। বয়স বেড়েছে। চাঙ্গা মনোবলের তারুণ্যভরা কেউ নেই সিদ্ধান্ত নেয়ার।

ফেনী জেলার ইসমাইল হোসেন নামের মাঠপর্যায়ের এক নেতা বলেন, আওয়ামী লীগের কাদের, তোফায়েল, আমু, মতিয়া, মজিবুল হক, মায়ার মতো রাজপথে নির্যাতন সহ্য করার শক্তি বিএনপির খুব কম নেতারই আছে। ক্ষমতায় যাওয়ার স্বপ্ন ও আন্দোলনের কথা এলে ত্যাগ, নির্যাতন, নেতৃত্ব ওগুলোও মাথায় রাখতে হয় সে ক্ষেত্রে তো আওয়ামী লীগ ভালোই এগিয়ে। আমাদের বিএনপির নেতৃত্বে লোভ ও দুর্বলতা রয়েছে। কৌশল বলে বলে দূরে আছি। খালেদা জিয়ার জন্যও কিছু করা সম্ভব হয়নি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের  বিএনপিপন্থি এক শিক্ষক বলেন, মনে রাখা দরকার কই মাছ সবসময় শুকনো মাটি পাড়ি দেয় না। একটা মৌসুম সময় থাকে। আন্দোলন করার জন্য বিএনপি শতশত ইস্যু পেয়েছে তার একটিও কাজে লাগাতে পারেনি। বিশেষ করে এবার দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে কূটনৈতিক সমর্থন থাকার পরও ফসল ঘরে তুলতে পারেনি। সব দলকে নিয়ে এক ব্যনারে কর্মসূচীতে আসতে পারেনি।  এখন ইস্যু ছাড়া ঘোষণা দিয়ে সরকারকে সরিয়ে ফেলবে এটা সূত্র ছাড়া অঙ্কের সমাধান খোঁজা মাত্র।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, ‘আওয়ামী লীগতো আন্দোলন করেছিল বিএনপির মতো একটি গণতান্ত্রিক দলের সাথে। আর আমরা (বিএনপি) আন্দোলন করছি আওয়ামী লীগের মতো একটি স্বৈরতান্ত্রিক দলের সাথে। যাদের নিজেদের কোনো সংগঠন নেই। আছে শুধু পুলিশ আর কিছু লাঠিয়াল বাহিনী। এ জন্য তাদের বিরুদ্ধে আন্দোলনে সময় লাগে। বাংলাদেশের ইতিহাসে ও পাকিস্তানের ইতিহাসেও আন্দোলনে সময় লেগেছে। পাকিস্তানের আইয়ুব খানকে সরাতেও ১০ বছর সময় লেগেছে এবং এরশাদকে সরাতেও আট বছর সময় লেগেছে। সুতরাং আমরা আন্দোলনে আছি এবং সফলকাম হবো। জনগণকে নিয়েই সফলকাম হবো।  

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান রহমান বলেন, আমরা সরকার পতনের আন্দোলনে আছি। আমাদের সঙ্গে দেশের জনগন এবং বেশী সংখ্যক রাজনৈতিক দল রয়েছে। ছুড়ান্ত আন্দোলন প্রসঙ্গে তিনি বলেন,আন্দোলন কখনো বলে কয়ে আসে না। এবার সরকারের পতনের আন্দোলন কবে সফল হবে এমন প্রশ্ন ঠিক নয়।

মেসেঞ্জার/ফামিমা

dwl
×
Nagad

Notice: Undefined variable: sAddThis in /mnt/volume_sgp1_07/tp4l1yw3zz9u/public_html/bangla/details.php on line 700