ঢাকা,  শনিবার
২৭ এপ্রিল ২০২৪

The Daily Messenger

কুষ্টিয়া মেডিকেলে ইনডোর চালু হয়নি ৫ মাসেও, রোগীদের ভোগান্তি

মেসেঞ্জার অনলাইন

প্রকাশিত: ১৭:২৭, ২৩ মার্চ ২০২৪

কুষ্টিয়া মেডিকেলে ইনডোর চালু হয়নি ৫ মাসেও, রোগীদের ভোগান্তি

কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। ছবি: সংগৃহীত

কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল উদ্বোধনের পর পাঁচ মাস পেরিয়ে গেলেও ইনডোর চিকিৎসা সেবা চালু করতে না পারায় প্রতিদিন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে রোগী ও তাদের স্বজনদের।

এদিকে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আসা ইনডোর রোগীদের সেবা দিতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে ২৫০ শয্যার কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের।

গত বছরের নভেম্বরে কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। কর্তৃপক্ষ বলছে, হাসপাতাল ভবনটি নির্মাণ শেষে গত ফেব্রুয়ারিতে গণপূর্ত বিভাগ তাদের কাছে হস্তান্তর করে। কিন্তু স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে প্রশাসনিক অনুমোদন না পাওয়ায়, হাসপাতাল পুরোপুরি চালু করতে পারছেন না তারা।

কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আউটডোরে প্রতিদিন প্রায় দুই হাজার রোগী চিকিৎসাসেবা নিতে আসেন। তাদের মধ্যে যাদের শারীরিক অবস্থা গুরুতর কিংবা জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসার প্রয়োজন, তাদের ২৫০ শয্যার কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়। 

কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে জেনারেল হাসপাতালের দূরত্ব প্রায় তিন কিলোমিটার। ফলে এক হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতালে যেতে ভোগান্তি পোহাতে হয় বলে বেশ কয়েকজন রোগী ও তাদের স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে।

এছাড়া জেনারেল হাসপাতালের পরিবেশও মানসম্পন্ন নয় বলেও অভিযোগ তাদের। দুর্ভোগ কমাতে কুষ্টিয়া মেডিকেলটি দ্রুত চালুর দাবি জানিয়েছেন তারা।

কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বর্হিবিভাগে কথা হয় সদর উপজেলার কলেজ শিক্ষক ইসারুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি বলেন, “কুষ্টিয়াসহ আশপাশের পাঁচ জেলার মানুষের উন্নত চিকিৎসা সেবায় স্বপ্নের প্রতিষ্ঠান কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। উদ্বোধনের পরও এখানে ইনডোর বা ভর্তি রোগীর পূর্ণাঙ্গ চিকিৎসা সেবা চালু না হওয়ায় চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।“

মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে থেকে আসা ইনডোর রোগীদের চাপের বিষয়টি টের পাওয়া গেল ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে গিয়ে।

এই ওয়ার্ডের স্টাফ নার্স মুনিরা খাতুন বলেন, “আমাদের এখানে প্রতিদিন স্বাভাবিক ও সিজারিয়ান প্রসূতি মায়েরা গড়ে ১০ থেকে ১৫টি সদ্যজাত শিশু জন্ম দেন। এর পাশাপাশি আরও দশগুণ রোগীর চাপ সামলাতে হয়।”

সড়ক দুর্ঘটনায় দুই পা ভেঙেছেন গাংনী উপজেলার গাড়াডোব গ্রামের ট্রলি চালক আসাদুল হক। তিনি বলেন, সার্জারি ওয়ার্ডের চিকিৎসক বলেছেন অপারেশন করে হাড়জোড়া লাগাতে হবে। আর্থিক অবস্থা ভালো না বলে কুষ্টিয়ার বাইরে না গিয়ে, মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শরণাপন্ন হয়েছিলেন। সেখান থেকে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

আসাদুল বলেন, “এখানে বড় বড় ডাক্তার স্যাররা আছেন, আমাকে দেখেছেন, তাতে আমি খুশি। কিন্তু এখানে লোক গিজগিজি করে। পা ফেলার জো নেই। টয়লেট তো ব্যবহারের যোগ্যই না। সিরিয়াল দিয়ে অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে হয়।

“ভেবেছিলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল নতুন হয়েছে, পরিবেশ ভালোই থাকবে। কিন্তু এখানে পাঠানো হয়েছে, এখানে দেখছি পরিস্থিতি খুবই খারাপ।”

কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শ্রাবণী খাতুন পিত্তথলির পাথর অপারেশনের জন্য ওই হাসপাতালেই ভর্তি হয়েছেন। তিনি বলেন, “চিকিৎসা পাচ্ছি, কিন্তু চারপাশে এত রোগী, গোটা পরিবেশ চরম অস্বাস্থ্যকর হয়ে উঠেছে।

“মেডিকেল কলেজের নিজস্ব হাসপাতাল ভবনে এখানকার রোগীদের নিয়ে গেলে, উন্নত পরিবেশে উন্নত চিকিৎসাটা পেতাম।”

কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সিনিয়র কনসালটেন্ট ডা. মো. রকিউর রহমান বলছেন, “কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে শিশুদের জন্য ২০টি বেডের বিপরীতে ২৪০ থেকে আড়াই’শ শিশুর চিকিৎসা দিতে গিয়ে চিকিৎসক থেকে নার্স সবাই একপ্রকার হাবুডুবু খাচ্ছেন। 

“নানাবিধ চ্যালেঞ্জের পরেও সাধ্য অনুযায়ী সেবা দেওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছি। খুব শিগগিরই যদি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিজস্ব ভবনে ইনডোর চিকিৎসা চালু হয় তাহলে পরিস্থিতির উন্নতি হবে।”

কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিউরো মেডিসিন বিভাগের চিকিৎসক মো. নাসিমুল বারী বাপ্পী বলেন, “কেবল বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক হলেই তো, গুরুত্বপূর্ণ বা জীবন শঙ্কায় থাকা রোগীর সঠিক ও উন্নত চিকিৎসা নিশ্চিত হয় না। তার জন্য চাই, অবকাঠামোগত সুবিধা।

“চিকিৎসার জন্য মনোরম পরিবেশ ও প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম, ওষুধপত্র প্রয়োজন। এখানে সর্বোচ্চ ইচ্ছা ও আন্তরিকতা থাকার পরও উন্নত চিকিৎসা সেবা ব্যাহত হচ্ছে, এটাই বাস্তবতা।”

হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. তাপস কুমার সরকার বলেন, ৫’শ শয্যার কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অস্থায়ী চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান হিসেবে ২৫০ শয্যার কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালটিকে গত ১০ বছর ধরে ব্যবহার করতে গিয়ে এখানকার চিকিৎসা সেবার ত্রাহী অবস্থা।

“প্রতিদিন এখানে প্রায় নয়শ থেকে এক হাজার ইনডোর এবং প্রায় দুই হাজার বহির্বিভাগে সেবা নিতে আসা রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এভাবে সেবা দিতে গিয়ে চিকিৎসক রোগীদের মধ্যে সেবাবান্ধব ও আস্থার সম্পর্কে বিচ্যুতি ঘটছে।”

“অথচ কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে উন্নত স্বাস্থ্য সেবার যে সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে, সেটা চালু হলেই সব সমস্যার সমাধান সম্ভব।” যোগ করেন তিনি। 

হাসপাতালের ইনডোর চালু না হওয়ার কারণ কী? জানতে চাইলে কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, “কিছু টুকিটাকি কাজ ছাড়া ইনডোর চিকিৎসা সেবা চালু করার সকল প্রস্তুতি প্রায় শেষ হয়েছে। এখন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে প্রশাসনিক অনুমোদন পেলেই প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগসহ হাসপাতালে ইনডোর রোগীরে চিকিৎসা সেবা চালু হবে।

“আগামী দুই তিন মাসের মধ্যেই তা সম্ভব হবে বলে মনে করছি।”

মেসেঞ্জার/মাহবুব

dwl
×
Nagad